দক্ষিণডিহি:
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূণ্য স্মৃতি বিজড়িত স্থান দক্ষিণডিহি। ফুল, ফল আর বিচিত্র গাছ গাছালিতে ঠাসাসৌম্য-শান্তগ্রাম দক্ষিণডিহি। খুলনা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ফুলতলা উপজেলা। উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গেলে দক্ষিণ ডিহিগ্রাম। গ্রামের ঠিক মধ্য খানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র-মৃণালিনীর স্মৃতিধন্য একটি দোতলা ভবন। এটাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি।
কলকাতার জোড়া সাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণ ডিহির সম্পর্ক নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাসারদা সুন্দরী দেবী জন্ম গ্রহণ করে ছিলেন এই দক্ষিণডিহি গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের কাকি ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী এই গ্রামের -ই মেয়ে। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী দক্ষিণ ডিহির -ই মেয়ে। তাঁর ভালো নাম ভবতারিণী, বিবাহের পর তাঁর নাম রাখা হয় মৃণালিনী দেবী। যৌবনে কবি কয়েক বার তাঁর মায়ের সঙ্গে দক্ষিণডিহি গ্রামের মামা বাড়িতে এসেছিলেন। এখানে কবিগুরু ও কবিপত্নীর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। ২৫শে বৈশাখ ও ২২শে শ্রাবণে এখানে নানা আয়োজনে রবীন্দ্রজয়ন্তী ও কবিপ্রয়াণ দিবস পালন করা হয়।
পিঠাভোগ:
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – এর পূর্ব পুরুষের নিবাস খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামে। খুলনা আঞ্চলিক প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর এর পরীক্ষামূলক সমীক্ষায় পিঠাভোগ গ্রামে রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষের ভিটার ভিত্তিপ্রস্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানে কবিগুরুর একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবছর এখানে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে।
রাড়ুলী:
বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য্যপ্রফুল্লচন্দ্র রায়(পি,সি,রায়) – এর জন্মভূমি। ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী রাড়ুলীতে স্যার পি.সি. রায় জন্মগ্রহণকরেছিলেন।
পি,সি,রায় ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী,দার্শনিক ও শিল্পী। সমাজ সংস্কারে মানবতাবোধে উজ্জীবিত ছিলেন তিনি। তদানিন্তন সময়ে পল্লী মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায় ব্যাংক পদ্ধতি চালু করেন। ১৯০৯সালেনিজজন্মভূমিতেকো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। চারটি গ্রামের নাম মিলে ১৯০৩ সালে বিজ্ঞানী স্যার পি,সি,রায় দক্ষিণ বাংলায় প্রথম আর,কে,বি,কেহরিশ চন্দ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানক রেন।
সেনহাটি:
খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রাম কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের জন্মস্থান। বাংলা সাহিত্যে কবির ‘দুটি কবিতা’ শীর্ষক ক্ষু্দ্র কবিতাটি কালজয়ী স্থান পেয়েছে। ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি’ কিংবা ‘চিরসুখী জন ভ্রমে কি কখন ব্যথিত বেদন বূঝিতে পারে’ কবিতা বাঙালি জীবনে অবশ্যপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত।
বকুলতলা, জেলা প্রশাসকের বাংলো:
বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় – এর স্মৃতিধণ্য খুলনার জেলা প্রশাসকের বাংলো। ১৮৬০-১৮৬৪ সাল ch©šÍ খুলনার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর থাকাকালীন সময়ে এই বাংলোই ছিল তাঁর বাসস্থান। ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত এই বাংলোর বকুলতলায় বসেই কবি রচনা করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম প্রেমের উপন্যাস ‘কপালকুন্ডলা’।
শিরোমণি:
মুক্তিযুদ্ধে খুলনার বীরত্বগাথার স্মৃতিবিজড়িত আরেকটি স্থান শিরোমণি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও খুলনা স্বাধীন হয়েছিল এক দিন পর ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে। খুলনা শিরোমণি কৌশলগত যু্দ্ধজয়ের এক অনন্য স্থান হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বিশ্বইতিহাসে। এখানে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধিসৌধ:
মুক্তিযুদ্ধের মহান বীরত্বের স্মৃতিবিজড়িত খুলনার মাটিকে ধণ্য করে এখানে ঘুমিয়ে আছেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন। খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে বাংলার এই বীর সন্তানের সমাধিসৌধ অবস্থিত।
চুকনগর:
মুক্তিযুদ্ধের বেদনাবহ গণহত্যার স্মৃতিবিজড়িত স্থান চুকনগর। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় অবস্থিত এই গ্রাম চুকনগর। ভারতীয় সীমান্তবর্তী এই গ্রামে ১৯৭১ সালের ২০মে খুলনা ও বাগেরহাট থেকে ভদ্রা নদী পার হয়ে আসা ভারত অভিমুখী হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানী বাহিনী। সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা না গেলেও চুকনগরে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ইতিহাসে এমন গণহত্যার নজির বিরল। হত্যাকাণ্ডেনিহতদেরস্মৃতিরউদ্দেশ্যেচুকনগরেএকটিস্মৃতিসৌধস্থাপনকরাহয়েছেযা"চুকনগরশহীদস্মৃতিস্তম্ভ" নামেপরিচিত।
গল্লামারী:
মুক্তিযুদ্ধের বেদনাবহ গণহত্যার স্মৃতি বিজড়িত আরেকটি স্থান গল্লামারী। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে ময়ূর নদীর তীরে অবস্থিত এই গল্লামারী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই স্থানে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানী বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর বাহিনী। খুলনা শহর মুক্ত হবার পর গল্লামারী খাল ও এর আশে পাশের স্থান থেকে প্রায় পাঁচ ট্রাক ভর্তি মানুষের মাথার খুলি ও হাড় গোড় পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় ঐ স্থানে আনুমানিক ১৫০০০ মানুষ হত্যা করা হয়। ১৯৯৫ সালে এখানে প্রথম একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। বর্তমানে সে স্মৃতিস্তম্ভ উন্নয়নের কাজ চলছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস